‘ছাত্রলীগকে আরো বেশি মানবিক হতে হবে’



পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে রাতের নীরবতা। জমাট অন্ধকার ডাকসু ভবনটাতেও। আলো জ্বলছে সেই মধুর ক্যান্টিনে। গোটা দেশে আলো ছড়ানো বহু রাজনীতিকের তীর্থস্থান এটি। ছাত্র রাজনীতির এই সুতিকাগারে ফুটেছে নতুন ফুল। ঐহিত্যবাহী ছাত্রলীগের হাল ধরেছেন নতুন কান্ডারি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন সাংগঠনিক নেত্রী। কমিটি ঘোষণার পর নতুন নেতৃত্বকে বরণ করে নেওয়ার রেশ চলছিল।সেই রাতে মধুর ক্যান্টিনের রাজনৈতিক আড্ডার মধ্যমনি ছিলেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।  মাত্র তিনদিন আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। হরেক রকম ব্যস্ততা, তবুও খানিকটা সময়  পূর্বপশ্চিমের জন্য আলাদা করে রেখেছিলেন দেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠনের এই শীর্ষনেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে  মুখোমুখি হয়ে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের  সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মাকসুদুল হক ইমু, ছবি তুলেছেন নাজমুল হাসান
জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলতেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তি মোটেও অতিরঞ্জিত ছিল না। কালের স্রোতে ভেসে গেছে কত দল, কালের ধূলোতে ঢাকা পড়ে গেছে কতো না সংগঠন। ব্যতিক্রম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পূর্ণ করার পরও ছাত্রলীগ ধরে রেখেছে তারুণ্য। ঐতিহ্যবাহী এ  ছাত্র সংগঠন থেকে যুগে যুগে  দেশ  পেয়েছে বলিষ্ঠ সব নেতাকে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে শাণিত হওয়া অনেক নেতাই সাফল্য পেয়েছেন জাতীয় রাজনীতিতে। সেই ধারাবাহিকতায় সাংগঠনিক নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনেক যাচাইবাছাইয়ের পর ছাত্রলীগকে নের্তৃত্ব দেওয়ার জন্য মনোনীত করেছেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের  ছাত্র বেড়ে ওঠেছেন কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর আওয়ামী ঘরানার পরিবারে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে  ওই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম শোভন।
পূর্বপশ্চিমের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কী বললেন ছাত্রলীগের সভাপতি, চলুন চোখ রাখি।
পূর্বপশ্চিম: আমরা জানি, আপনার দাদা আওয়ামী লীগ থেকে কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারি-নাগেশ্বরী এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন। আপনার বাবাও একসময় ছাত্রলীগ করতেন। এখন তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সবকিছু মিলিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আপনার যুক্ত হওয়ার গল্পটা জানতে চাই।
শোভন:  আসলে আমার জন্মটাই হয়েছে রাজনৈতিক একটি পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই আমি রাজনৈতিক একটা বলয়ের মাঝে বেড়ে উঠেছি। আমাদের ভুরুঙ্গামারীতে আমরাই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করতাম। একথায় যদি বলি আমার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি।  আমার বাবা আমাদের এলাকায় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, যুবলীগের সভাপতি ছিলেন, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। মূলত আমি স্কুলে পড়াশোনাকালীন আমার দাদা, বাবার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে শুনতাম। ছাত্রলীগ সম্পর্কে তারা বিভিন্ন আলোচনা করতেন। তখন থেকে আস্তে আস্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করলাম। এরপর থেকে মিছিল মিটিংয়ে নিজেকে জড়িয়েছি। 
পূর্বপশ্চিম: আপনার সভাপতি পদে আসাটাকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন, আবার অনেকেই অপ্রত্যাশিত বলছেন। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
শোভন:  এ বিষয়ে বলবো, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি, বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতি আমার একটা আবেগ ভালবাসা আছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম সে হিসেবেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে উভয় পদের জন্য ফরম কিনেছিলাম। বাকীটা মূল্যায়ন করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।  তিনি আমার উপর যে গুরু দ্বায়িত্ব দিয়েছেন তাতে আসলে আনন্দিত হবার কিছু নেই, এটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি। তিনি আমাকে যে দুই বছর সময় দিয়েছেন এই দুই বছরের মধ্যে ছাত্রলীগকে একটি রুল মডেল হিসেবে দেখাতে চাই। 
পূর্বপশ্চিম:  ছাত্র রাজনীতি একসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখা হলেও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসায় ছাত্রনেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায়, ছাত্র রাজনীতি  আর ছাত্রনেতা নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য।
শোভন: এই কথার সাথে একমত নই। ছাত্র রাজনীতিকে এখনো শ্রদ্ধার সাথেই দেখা হয়।  ছাত্রলীগ করে কারা? যারা ছাত্র তারাই কিন্তু ছাত্রলীগ করে। যারা চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ তারা কিভাবে ছাত্র হয়? তারা তো ছাত্র না। তার মানে তাদের সাথে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নাই। আর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মাদক ব্যবসায় ছাত্রনেতাদের জড়িত থাকবার এমন অভিযোগ আসলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র আগেও ছিল। নিজেদের কাটতি বাড়াতেই আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে গণমাধ্যমে। আমাদের সঙ্গে কথা না বলে ঢালাওভাবে লেখা হয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে, ছাত্রলীগের অমুক নেতা ছিনতাই করেছে। আবার কখনো কখনো অনেক জায়গায় লেখা হয় ‘সাবেক ছাত্রলীগ নেতা’।  তার মানে ‘ছাত্রলীগ’ শব্দটি না লিখলে যেন খবরেই হয় না। তবে এটা ঠিক যে, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে অনেকে অপরাধ করে থাকে।  ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
পূর্বপশ্চিম:  ছাত্রদের প্রধান কাজ পড়াশোনা করা, কিন্তু নব্বইয়ের পর থেকে বাড়তি উপার্জনের জন্য  ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনকে ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করে ধান্ধাবাজিতে মেতে ওঠার অভিয়োগ আছে ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে। এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি?
শোভন:  ছাত্রলীগ কিন্তু বরাবরই সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে, দেশের পক্ষে। ১৯৪৮ সাল থেকে এইভাবে ছিল এখনো আছে এবং সামনেও থাকবে। তবে যেসব কারণে ছাত্রলীগের ইমেজ নষ্ট হয় সেসব কাজ থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করবো।  সমর্থিত ছাত্র সংগঠনকে ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করে ধান্ধাবাজিতে মেতে ওঠার অভিযোগ কারো বিরুদ্ধে থাকলে তার বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেব।

No comments

Powered by Blogger.