বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ও এগিয়ে যাচ্ছে বিন্দিয়া কবির!



এই সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা বিন্দিয়া কবির কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো। মা’র পরে বাবাও চলে গেলো না ফেরার দেশে। অগত্যা কী আর করা! পরিবারের হাল ধরার স্বার্থে খুলনা থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা হলো বিন্দিয়া কবির। তার আগে জুটিয়ে নিলো বায়িং হাউজে একটি চাকরী। এরপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত। তবুও থেমে থাকেননি তিনি। বরং হাজারবার ভেঙে গিয়েও লড়েছেন নতুন উদ্যমে। নিজেকে ‘সান্তনা’ দিয়ে বলেছেন ‘তুই-ই জয়ী হবে বিন্দিয়া, শুধু একটু অপেক্ষা কর’।
ছোটবেলায় উদীচিতে নাচ-গান শেখা বিন্দিয়া কবিরের কখনোই ইচ্ছে ছিলো না মিডিয়ায় কাজ করার। ছাপোষা-সাধারণ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। তবুও কিভাবে যেন জড়িয়ে গেলেন লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের এই দুনিয়ায়।বিন্দিয়া বলেন, ‘২০০৩ সালে মা এবং ২০০৭ সালে বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কারণ পরিবার আমার কাঁধে। সংসার খরচ-চলাফেরা-লেখাপড়া খরচসহ আনুষঙ্গিক সব কিছুর জন্য প্রচুর টাকার দরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা আমার কাছে ছিল না। আত্মীয়-স্বজনরা কালেভদ্রে সাহায্য করলেও কতদিন? পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, কিছু একটা করতে হবে। অনেক যোগাযোগের পর রাজধানীর একটি বায়িং হাউজে মেলে রিসিপসনিষ্ট পদে চাকরি। এরপর চলছিলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। হঠাৎ একদিন জানতে পারি এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমতাজ আলী শাকুর আমাদের নিকটাত্মীয়। সুযোগ করে গেলাম তার কাছে। তবে চিত্রনায়িকা হওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। সেখানে কথোপকথনের এক ফাঁকে ‘দুষ্টুমি’ করে বললাম, আচ্ছা আপনার তো অনেক যোগাযোগ, শক্তিও। কারণ আপনি এমডি। দেখেন না কোনভাবে আমাকে নায়িকা বানানো যায় কিনা। বিষয়টি তিনি ‘সিরিয়াসলি’ নিয়ে বেশ ক’জন খ্যাতনামা পরিচালক-প্রযোজককে বললেনও। সঙ্গে জানালেন, পরে আরেকদিন আসতে তখন কিছু একটা তিনি করেই দেবেন। কে জানতো সেদিনের সেই মজা করে বলা কথাটাই আজকে আমাকে চিত্রনায়িকা বানাবে। এরপর তো বিধাতার অশেষ কৃপায় কাজ মিললো। হলো অল্পস্বল্প নামডাকও।’
বিন্দিয়া কবির অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম ‘জান’। জি সরকার পরিচালিত এই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক ও মডেল ইমন। জানালেন প্রথম সিনেমায় অভিনয় ও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো নিয়ে এই প্রতিবেদককে নিজের অনুভূতির কথা।
বিন্দিয়া বলেন, শরীর কাঁপছিলো ক্যামেরা সামনে দাঁড়িয়ে। ভয় করছিলো। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না আমি নায়িকা হতে যাচ্ছি, তাও আবার ইমন ভাইয়ের বিপরীতে। শুটিংসেটে গিয়ে ঠিকঠাক সাহসও পাচ্ছিলাম না প্রথম প্রথম ইমন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার। পরে জড়তা ভাঙলো অনেক কষ্টে। দেখলাম উনি দারুণ মানুষ। আর মিশুকও। এরপর দু’জনার বোঝাপড়ায় ভালোভাবে কাজ শেষ হলো। সিনেমা মুক্তি পেলো। প্রচুর রেসপন্সও পেলাম দর্শকদের কাছ থেকে। ’
এর মাঝে ইন্টারন্যাশনাল অ্যামিউজমেন্ট ক্লাবে চাকরি পান বিন্দিয়া। শুটিং না থাকলে সেখানেই সময় দিতেন তিনি। এরমধ্যে এলো তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ। সিনেমার নাম ‘দাবাং’। একেএম আজাদ খান পরিচালিত সেই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। ‘দাবাং’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পূর্বের ন্যায় প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেত্রী।
এরপর তিনবছর বড় পর্দার বাইরে চলে যান বিন্দিয়া। ফেরেন এম এ রহিম পরিচালিত ‘মার্ডার-২’ সিনেমা দিয়ে। সেখানে তার সহশিল্পী ছিলেন চিত্রনায়ক শাহরিয়াজ। এই সিনেমার পর বিন্দিয়া অভিনয় করেন রাকিবুল ইসলাম রাকিব পরিচালিত ‘মাস্তান পুলিশ’ চলচ্চিত্রে। চিত্রনায়ক কাজী মারুফ ছিলেন তার সহশিল্পী।
বড় পর্দায় অভিনয়ের ফাঁকে এই অভিনেত্রী বিজ্ঞাপন চিত্রেও কাজ করেছেন। পেয়েছেন দর্শক-নির্মাতার বাহবা। বর্তমানে বিন্দিয়া রাকিবুল ইসলাম রাকিবের ‘অগ্নিশিখা’ ও ‘মাঝির প্রেম’ নামে দুটি সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বিন্দিয়া কবিরের আগামীর পথচলা শুভ ও মসৃণ হোক। তার জন্য শুভকামনা।

No comments

Powered by Blogger.